ঝাড়গ্রামের সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
“আমি না চাইলে হারাতে পারবেন না”— জঙ্গলমহলের জনসভা থেকে এভাবেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) উদ্দেশে হুঙ্কার ছুঁড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ঝাড়গ্রামের (Jhargram) পাঁচমাথা মোড়ে আয়োজিত পথসভা থেকে বিজেপি (BJP) ও কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, "আমি জ্যান্ত বাঘ। আহত করতে এসো না। তাহলে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠব!"
স্মৃতিচারণের মোড়কে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল ক্ষোভ ও প্রতিবাদের আগুনে জর্জরিত। বলেন, “আমি সিপিএমের গুলি খেয়েও বেঁচে গিয়েছি। মাথা ফাটানো হয়েছিল, শরীর জুড়ে রক্তারক্তি হয়েছিল। তোদের পিঁপড়ের মতো মারব, ভয় পাই না আমি!” বিজেপিকে নাম না করে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আমি চাইলে তবেই হারাতে পারবে, আমি না চাইলে না। এত সহজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানো যায় না।”
বারুইপুর পূর্ব ও ময়না কেন্দ্রের দুই ইআরও-সহ মোট চার সরকারি আধিকারিককে সাসপেন্ড করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। বলেন, “কমিশন অমিত শাহর দালালি করছে। বাংলা সহ্য করবে না এই অপমান। আমার অফিসারদের শাস্তি দিতে দেব না। ক্ষমতা থাকলে দেখাও!”
ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার আশঙ্কা নিয়ে জনসাধারণকে সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ভোটার লিস্টেই আপনার অস্তিত্ব। এখনই নাম তুলুন। শুধু তুললেই হবে না, ফাইনাল লিস্টেও দেখে নেবেন। বুথে গিয়ে যেন না বলেন— ‘নামই নেই।’” একইসঙ্গে এনআরসি নিয়ে পুরনো অভিযোগ পুনরাবৃত্তি করে বলেন, “অসম থেকে বাংলায় নোটিস পাঠিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। সাহস তো কম নয়!”
সভামঞ্চে উঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯২ সালের স্মৃতি টেনে আনেন। বলেন, “বেলপাহাড়িতে স্কুটার চালিয়ে গিয়েছিলাম। দেখেছিলাম, মানুষ পিঁপড়ে ও গাছের শিকড় সেদ্ধ করে খাচ্ছে। সেদিনই ঠিক করেছিলাম, ক্ষমতায় এলে এই পরিস্থিতি বদলাব। তাই চালু করেছিলাম ‘খাদ্যসাথী’। বাংলার একজন মানুষও যেন অভুক্ত না থাকে।”
মমতা বলেন, “বাংলায় কথা বললেই আজ বাংলাদেশি বলা হচ্ছে। রোহিঙ্গা বলছে। এটা বাংলা ভাষার উপর আক্রমণ।” সাধারণ মানুষকে উদ্দেশ্য করে তাঁর বার্তা— “জয় বাংলা বলুন। প্রতিবাদ করুন। বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ব না। ভোটার কার্ড কেবল কার্ড নয়, এটা আপনার অস্তিত্বের প্রমাণ।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তৃতা ছিল সরাসরি ২০২৬-র বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির ঘোষণা। আগের মতোই ঝাঁঝালো ভাষায়, আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করে দেন মমতা। বলেন, “আমি যেদিন নিজে মনে করব, সেদিন হঠাতে পারবেন। না হলে, আপনার লোকেরাও আমাকে ভোট দেবে।”
সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে মমতার আশ্বাস, “আপনারা মানুষের কাজ করেন। আপনাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমার। ওরা ভয় দেখাবে, কিন্তু কিছু করতে পারবে না। বাংলায় ভোট করানোর নামে অত্যাচার চলবে না।”